Tuesday, March 9, 2010

আমার সেরা মুহুর্ত

কেও যদি বলে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় দিন কোনটা, তাহলে আমার মাথায় এক গাদা চিন্তা এসে জটলা পাকিয়ে একাকার হয়ে যাবে। আমি কিছুই বলতে পারবনা। কিন্তু ভাবতে বসলে আমার মাথায় একটা দিন আসে, সেটা খুবই সুখের দিন। একটা আক্ষরিক অর্থেই অপার্থিব সুখের দিন। যেদিন আমি প্রথম ছায়াপথ দেখেছিলাম। দিন তারিখ মনে নেই, তবে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর কি অক্টোবর মাস হবে। আকাশ খুবি পরিষ্কার ছিল, হাল্কা একটা দুটো অর্ধস্বচ্ছ মেঘ ছিল। আমি তেনুঘাট থেকে সূর্য ডোবার বেশ কিছু পরে রওনা দিয়েছিলাম। আকাশে অনেক তারা ফুটেছিল। আকাশ খুব পরিষ্কার ছিল, তাই গোধুলি বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা। তখন আমি কর্মসুত্রে বোকারোতে থাকি। খাতা কলমে নাম বোকারো স্টীল সিটি। আমার বাহন Kawasaki Bajaj Boxer AR বাইক। প্রতিদিন আমাকে বোকারো জেলার নানা যায়গায় যেতে হত কম্পিউটার সংক্রান্ত সার্ভিস কল অ্যাটেন্ড করার জন্য। আমি এসবিআই তেনুঘাট থেকে কাজ শেষ করে ফিরছিলাম। ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে তেনুঘাট ড্যামের পাশ দিয়ে রাস্তা কিছুটা এঁকে বেঁকে কিছুটা সোজা গিয়ে চলে গেছে পেটারবার। পেটারবারে রাস্তাটা মিশেছে NH23 তে। এই রাস্তা ধরে সোজা পুর্ব দিকে গেলে বোকারো পৌছে যাওয়া যায়। মোটের উপর সহজ রাস্তা কিন্তু বেশ কিছুটা পথ। ওদিকটায় রাস্তা বেশ ফাঁকাই থাকে। জনবসতি বেশ কম। রাতে তো আরও কম। ১০ মিনিট বাইক চালালেও রাস্তায় একটাও গাড়ী বা মানুষ জন চোখে পরেনা। আমি ফাকা রাস্তায় কখনও মাইলেজের কথা ভাবিনা। খুব দরকার না পরলে ৬৫র নিচে স্পীড নামাইনা। তো সেদিনও বেশ জোরেই নক্ষত্র খচিত আকাশের নিচ দিয়ে তীব্র হেড লাইট জালিয়ে আসছি। সেদিন আকাশে চাঁদ ছিলনা। আলো বলতে শুধু তারার আলো আর আমার বাইকের হেড লাইট। আর মাঝে মাঝে দুধারের গ্রামের বাড়ির আলো। লম্ফ কিংবা ইলেকট্রিক বাল্ব। আমি বাইকের আলোয় যা দেখা যায় তাই দেখতে দেখতে আসছিলাম। দুধারে জঙ্গল, কুড়ে ঘর, ফাকা মাঠ, উচু নিচু জমি, পাথরে ঢিপি, একটা দুটো পাকা বাড়ী। মাঝে মাঝে আকাশেও দেখছি। দেখছি আজ যেন অনেক বেশী তারা দেখা যাচ্ছে। এভাবে দেখতে দেখতে NH23 এসে পৌছালাম। এবার বাদিকে মানে পুর্ব দিকে যাওয়া প্রায় ২৫ কিমি। এদিকে গাছ পালা একটু কম। রাস্তাও অনেকটা চওড়া। ফলে অনেকটা আকাশ দেখা যাচ্ছিল। এত তারা আমি আমাদের হালিসহরে বাড়িতে বসে ছোটো বেলায় দেখেছি। অনেকদিন হল আকাশে এত তারা দেখিনা। বিজ্ঞাপনের আলো আর বায়ু দুষন মিলে আমাদের আকাশটা অনেকটা আবছা করে দিয়েছে। সেদিন আমার মন রাস্তায় কম আর আকাশে বেশি ছিল। আমার মনে হল আকাশে যেন হালকা একটা মেঘ ভাসছে। পুরো আকাশ জুরে এদিক থেকে ওদিকে চলে গেছে। মেঘটা আমি অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করলাম, তার পর হঠাতই আমার মাথায় এল এটা মেঘ হতে পারেনা, কারণ এর মধ্যে মধ্যে বেশ কিছু ঝিক মিক করা তারা দেখা যাচ্ছে। যেই মনে হল এটা মেঘ নয় ছায়াপথ আমি সম্পুর্ন অন্ধকার রাস্তায় বাইক থামালাম, হেলমেট খুললাম, আর ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে আকাশে তাকিয়ে থাকলাম। সম্পুর্ন অন্ধকার, হেডলাইট বন্ধ। তারার আলোতে দেখতে পেলাম একটা ফাকা মাঠের মাঝে একটা সরু খালের উপর একটা সিমেন্টের পুলের উপর দাড়িয়ে আছি। ওই মুহুর্তটা আমার জীবনের সেরা মুহুর্ত। আমি এর পরেও আর কয়েকবার ওই রাস্তা দিয়ে গেছি, কিন্তু সেদিনের মত এত তারা আর ছায়াপথ আর কোনও দিনও দেখিনি। এখনও যখন আমার মন খারাপ হয় তখন আমি ওই দিনটার কথা ভাবি।