Tuesday, April 10, 2012

পাগল মন

আবার অনেক দিন পর আমি বাংলায় ব্লগ লিখছি। কি লিখব জানিনা। বেশ কিছু পুরানো ভাবনা চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করছে। পুরানো মানে যেগুলো আমি আগেও অনেক বার ভেবেছি কিন্তু ভেবে কিছু শেষ করতে পারিনি। এখন অস্ট্রেলিয়াতে থাকি। এক বছর হল। আমি আর শ্বেতা আমাদের একান্ত নিজস্ব ভাবে ব্যাক্তিগত সময় কাটাচ্ছি। শ্বেতার দৌলতে খাওয়া দাওয়ার কোনও সমস্যা নেই। বরং কলকাতায় থাকার চেয়ে অনেক অনেক ভালো ভাবে আছি। সব চেয়ে ভাল বিষয় হল এখানে পলিউশন নেই একেবারে। অ্যাডিলেইড একটা ছোট শহর, বেশ গোছানো, খুব বিখ্যাত কিছু দেখার নেই, তাই বহিরাগত ট্যুরিস্টের ভির নেই। বড় সর ব্যবসার যায়গা নয়, তাই শহরেও ভিড় কম। খুব ব্যস্ত সময়েও শহরে সহজেই হেটে চলে বেরানো যায়। বাসে সহজেই ওঠা নামা করা যায় ভদ্র লোকের মত। প্রচুর বড় বড় গাছ, বিশাল বিশাল পার্ক, শহরের মাঝখানে পার্ক, শহরের চার দিকে ঘেরা পার্ক, অসংখ সবুজ মাঠ। গাছে গাছে রঙ্গিন পাখি, মাঠে গোলাপি ধুসর আর সাদা কাকাতুয়া চরে বেরায়। সব কিছু মনোরম। টাকা পয়সা নিয়ে টানাটানি নেই, এক মাসে বেশী খরচ হয়ে গেলে, পরের মাসে কি করে ক্রেডিট কার্ডের বিল দেব সেটা নিয়ে ভাবতে হয়না। 

এগুলো সব ভাল ভাল কথা, কিন্তু সব কিছু ভাল হলেও সব কিছু সব সময় আনন্দের কারণ হয়না। এখানে মা নেই, বাড়িতে ব্রডব্যান্ড, কম্পিউটার নেই যে মা কে স্কাইপে ভাল করে দেখব। মা'র সাথে সপ্তাহে ২ দিন ১০-১৫ মিনিট করে ফোনে কথা হয়। আমি কল্পনা করতে থাকি মা এখন কি করছে, কোন ন্যাতানো শাড়ি পরে আছে, মা'র ঘরোয়া স্টাইলে। নাকি মা একটা নতুন তাঁতের শাড়ি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। মা হয়ত একটা রান্না মাঝ পথে থামিয়ে আমার সাথে কথা বলছে, কিংবা চা এর জল গরম করে এসেছে। পুজো দেওয়া এখনো বাকি, কিছু খাওয়া হয়নি অনেকক্ষন। আমি যখন প্রথম চাকরি নিয়ে হায়দ্রাবাদ চলে গেছিলাম তখন মা খুব কেঁদে ছিল, মাসির বাড়ির বড় বৌদি এসেছিল সামাল দিতে। আমি এক বছর বাদেও মা'কে বলতে পারছিনা যে আমি আরও এক বছর বাদে বাড়ি যাব। সে ১০ বছর আগের কথা। সেই প্রথম আমি বাড়ির বাইরে পা রেখেছি। বাঙালি মা'রা কখনও ছেলে মেয়ে দের বড় হয়ে যেতে দেখেনা। এখানে পাশ্চাত্য সমাজের রীতি অনুযায়ী কেও ১৮-২০ বছরের পর মা-বাবার সাথে থাকেনা। বিশেষত ছেলেরা, সেই দিক থেকে আমি ২১ বছর বয়স থেকে ঘর ছাড়া। মাঝে কিছু দিন টিসিএসে জয়েন করে বাড়িতে থাকতাম, তারপর বিয়ে করে কলকাতায়। 

আমার কিছু অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা আছে। যেটা হয়তো যবে থেকে মানুষ নিজেকে মানুষ বলে চিনেছে তবে থেকেই ভাবছে। আমি কে? আমি কেন আছি? আমি কেন ভাবতে পারি? আমি কোথা থেকে এসেছি? কোথায় যেতে চাই? এখানে আমি না হয়ে "আমরা"ও হতে পারে। আমাকে সব চেয়ে বেশী ভাবায় নাসার তোলা নেবুলা, গ্যালাক্সি, বহু দূরের তারার ছবি গুলো। কেও হয়তো নতুন, কেও মরবে মরবে করছে, কারো হয়ত সদ্য পুনর্জন্ম হয়েছে নতুন রুপে। কোথাও তারাদের আতুর ঘর। আসলে কেও মরেনা, কেও এক দেহে লীন হয়ে যায়, কেও বিচ্ছিন্ন হয়ে শক্তি বিকিরণ করতে থাকে লক্ষ কোটি বছর ধরে। টান ধাক্কা, জন্ম মৃত্যু, রুপান্তরের এক অদ্ভুত খেলা চলে আসছে, ঠিক কবে থেকে কেও জানেনা। এত এত আলোকবর্ষ দুরত্ব, এত এত লক্ষ কোটি বছরের সময়ের হিসাব ঠিক অনুভব করা যায়না। মানুষ পৃথিবীর মত আরো একটা গ্রহ খুঁজে চলেছে অনেক দিন ধরে। অনেক গুলোর অস্তিত্ব জানা গেছে, কিন্তু সেখানে আদৌ এখানকার মত হাওয়া জল আছে কিনা, কেও নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা। আর থাকলেও, মানুষ কি করে ওই গ্রহে পৌছাবে কেও জানেনা। আমার ভাবতে অদ্ভুত লাগে, সোনা প্লাটিনাম রুপা, এই সব ভারী ধাতু গুলো আসলে কোনো এক নক্ষত্রের মৃত দেহের অংশ। কে জানে আমার আঙ্গুলে যে প্লাটিনাম আর সোনার আংটিটা আছে তার পরমাণু গুল কোন তারা থেকে এসেছিল, সেটা কত বছর বেচে ছিল, সেটা কি ধরনের তারা ছিল। সব কিছুর পিছনে একটা অদ্ভুত সামঞ্জস্য আছে। সব কিছুর ক্ষুদ্রতম কণা একই জিনিস, তাই দিয়ে সব পরমাণু, সব অনু, সব যৌগ তৈরী হয়েছে। পুরো বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সব কিছু একি জিনিস দিয়ে তৈরী। এগুলো হল যা দেখা যায়। আবার আছে ডার্ক ম্যাটার। কৃষ্ণ পদার্থ। এটা নিয়ে আবার বিশেষ কিছু জানা যায়নি। অদ্ভুত। ভাবি, আর আমার পাগল পাগল লাগে। একটা মহা বিস্ফোরনের পর এই সব শুরু। এই গ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি, নিহারীকা, সব তৈরী হয়েছে বিগ ব্যাংএর পর। বিগ ব্যাংটা কেন হল, আর এর আগে কি ছিল সেটা কেও জানেনা। আশ্চর্য্য।