Sunday, October 28, 2007

বেলুন আর লজেন্স

ছোট বেলায় আমি এখনকার থেকে আরো অনেক বেশি বোকা ছিলাম। সেরকমই একটা বোকামির কথা আজকে আমার মনে পরছে। আমার বাবা স্বর্নকার ছিলেন, চোখের পাওয়ারের প্রব্লেমের জন্য এখন আর কাজ করতে পারেননা। যাইহোক, বাবা ছিলেন শিল্পী, ব্যবসায়ী নয়, তাই আমরা খুব একটা স্বাচ্ছন্দের মধ্যে ছিলামনা। দরকারী সব জিনিসি পেতাম, কিন্তু সখের কোনো জিনিস কিনতে হলে খুব মুশকিলে পরে যেতাম। পূজোতে আমার একটাই জামা প্যান্ট হত। অথচ আমার পাড়ার খুব গরীব বন্ধুরও দেখতাম, দুটো, কি তিনটে জামা হয়েছে। ওদের, কাকা কিংবা মামা হয়ত দিত। আমার কাকাও নেই, মামারাও অনেক দূরে দূরে থাকে, আমার মাসতুতো ভাইবোনের সংখ্যাও বেশ বেশী। সুতরাং সেদিক থেকেও কিছু পাওয়ার আশা ছিলনা। সবাই দেখতাম, ষষ্ঠী থেকেই নতুন জামা পরতে শুরু করেছে, আমি সপ্তমীর আগে নতুন জামা পরতে পারতামনা, সকালে বিকেলে একই জামা। আর দুদিন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গত বছরের একটু খাটো পূজোর জামা, আর নাহলে দাদাদের, ছোট হয়ে যাওয়া, জামা পরতাম। পুরনো জামা পরে ঠাকুর দেখতে যেতে খুব লজ্জা করত। যাইহোক, যে কথাটা লিখতে বসেছিলাম, সেটা এখনও লিখিনি। আমাদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে, উপহার দেওয়া নেওয়ার প্রচলন ছিলনা। কেও যদি ঘুরতেও আসত তাহলে, বাড়ীর ছোটদের জন্য হাতে করে কিছু নিয়ে আসত না। একবার আমার মাসীর দেওর একাই আমাদের বাড়ীতে ঘন্টা খানেকের জন্য বেড়াতে এসেছিলেন, যথারীতি খালি হাতে। উনি আমাকে খুব ভালবাসতেন, বলে জানতাম। ওনার একটা মুদীর দোকান ছিল। আমি আশা করেছিলাম যে উনি আমার জন্য কিছু নিয়ে আসবেন। উনি যখন চলে যাচ্ছিলেন আমি চুপি চুপি তার কানে কানে বললাম যে “পরের বার যখন আসবেন, তখন আমার জন্য বেলুন আর লজেন্স নিয়ে আসবেন”। উনি চলে গেলেন, কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এলেন, পকেটে এক প্যাকেট লজেন্স আর বেলুন নিয়ে। আমিতো তখন লজ্জায় পরে গেছি। কিন্তু আমি সেগুলো নিয়েছিলাম। তারপর আমার বাবা, মা, দুইদাদা, সবাই খুব শাসন করল, আমি কিছুতেও তাদের বুঝিয়ে উঠতে পারলামনা যে আমি শুধু তার কর্তব্যই মনে করিয়ে দিয়েছিলাম। কোন বাড়ীতে ছোটো ছেলে থাকলে, সেই বাড়ীতে বেড়াতে গেলে কিছু ছোটখাট উপহার নিয়ে যাওয়া উচিত। তারপর আমার দাদারা সেই বেলুন ফোলাল, ফাটাল, লজেন্স খেল, কিন্তু কেও আমাকে একবারও বাহবা দিলনা। তারপর বহুদিন সেই মাসতুতো কাকা আমাদের বাড়ীতে আসেননি।

Monday, August 27, 2007

অভ্যন্তরীন পূর্ণ প্রতিফলন


এই যে ছবিটা, কত সাধারণ। তবু কত অসাধারণ। এটা আমি তুলেছি, হালিসহরে। হালিসহরে আমার বড় হওয়া । একদিন কোনও এক অকাজে বেরিয়েছিলাম, পথে হঠাৎ খুব জোর বৃষ্টি এল। ছাতার থেকে মাথা ছিল বেশি, তাই ভিজতে হ্ল। আমার চোখ সবসময় সুন্দর জিনিস খোঁজে। এই কচু পাতাটা আমার চোখে পরে গেল। অল্প হাওয়াতে বৃষ্টির জল আর কচু পাতার পুরো সিস্টেমটা বেশ অস্থিরতার (unstability-র) মধ্যে ছিল। আমি কিছুক্ষন মন দিয়ে দেখলাম, তার পর আমার মোবাইল ক্যামেরাটিতে মুহুর্ত টাকে স্মরনীয় করে রাখার চেষ্টা করলাম।
আমরা জানি কচু পাতায় বা পদ্ম পাতায় কেন জল পরলে চকচক করে। পাতার সূক্ষ রোঁয়া, জলের সারফেস টেনসন, অভ্যন্তরীন পূর্ণ প্রতিফলন, (আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি) এই সবই আমরা জানি। তবু কেন জানি এই সমস্ত বিজ্ঞানকে পিছনে রেখে আমরা পুরো জিনিসটার মধ্যে শুধুই সৌন্দর্য্য দেখতে পাই। বিজ্ঞান বাস্তব, কিন্তু যে সৌন্দর্য্য দেখতে পায় তার কাছে, বিজ্ঞানের চেয়ে সৌন্দর্য্য আর কাছের বাস্তব। একে বারে মনের কাছের বাস্তব। বিজ্ঞানটা শেখা, সৌন্দর্য্যবোধটা নিজের মনের মধ্যে অঙ্কুরিত হওয়া।

Tuesday, August 21, 2007

মনে হল, তাই লিখি

একুশে আগষ্ট, দু হাজার সাত। আজ থেকে আমার নতুন ব্লগ শুরু করলাম।
ছোট বেলায় ডায়রী লিখতাম। লেখা কমতে কমতে একটা ডায়রী আধখানা ফাকা পরে রইল। ধরা যেতে পারে এটা আমার ডায়রী, তবে দিনলিপি নয়। যখন পড়াশোনা শেষ হতে না হতে চাকরি নিয়ে রাচীঁ চলে গেলাম তখন চিঠি লিখতাম, পাতার পর পাতা। একটা চিঠি আমি কখনও এক বারে লিখতামনা। যখন যা মনে হত তাই লিখতাম। তার পর চাকরী পালটে কলকাতায়। চিঠি লেখার গল্প শেষ হল। তবু আমার মনে হত কিছু লিখি। বানিয়ে বানিয়ে গল্প লিখতে পারিনা। কবিতার লেখার মত ততটা কবি কবি ভাব আমার সহজে আসেনা। তত দিন অপেক্ষা করতেও ভাল লাগেনা। তাই গদ্যতেই শুরু করে দিলাম। এই লেখা গুলো আমার কবিতা না হয়ে ওঠা ভাবনা। আমার চার পাশে রোজকার ছোট ছোট যে সব বাস্তব নাটক, কবিতা, গল্প মনে দাগ কাটে কিংবা শুধু একটু আচড় কেটে যায় সেগুলিই হবে আমার লেখার বিষয়।